চাঁপাইনবাবগঞ্জে গরুর গোবর থেকে গুঠা তৈরী করে সহস্রাধিক মহিলার কর্মস্থান

Date: 2025-02-18
news-banner
আহসান হাবীব,শিবগঞ্জ  চাঁপাইনবাবগঞ্জ ঃপ্রতিনিধি গোবর থেকে ঘুঠা বানিয়ে স্বাবলম্বী সহস্রাধিক নারী। তবে এই কাজের জন্য কাউকে সরকারি বা বেরসারকারিভাবে সহায়তা করা হয় না।চঁাপাইনবাবগঞ্জে গরুর গোবর থেকে নুনদা বা গুঠা তৈরী করে সহস্রাধীন গৃহিনীর বাড়তি আয়ের কর্মসংস্থান হয়েছে। যেখানে কোন পুঁজি বা মূলধন লাগে না। শুধু বাড়িতে দুর/চারটা গরু থাকলেই হয়। আর চঁাপাইনবাবগঞ্জ জেলায় প্রায় প্রতি পরিবারেই গরু পালন করে। এই গুঠা চঁাপাইনবাবগঞ্জে নতুন নয়। শতাধিক বছর থেকে এ ঐতিহ্যবাহী গুঠা তৈরীর প্রথা প্রচলিত আছে। গুঠা তৈরী করে চঁাপাইনবাবগঞ্জ জেলারর নিম্নবৃত্তি পেশার গৃহিনীরা। তারা গুঠা তৈরী করে তা বিক্রী করে সংসারের নানা কাজে সহযোগীরা করে থাকে। যেমন ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার খরচ,পোশাক কেনা, নিজের শাড়ি,জামা সহ বিভিন্ন ধরনের কাপড়। শুধু তাই নয় গরিরেবর ঘরের এ গৃহীনরা তিল তিল করে টাকা জমিয়ে আকস্মিক বিপদের সময়ও কাজে লাগায়।এ গুঠা গ্রাম এলাকা থেকে শত শত ভ্যান চালন ক্রয় করে জেলা ও জেলার বাইরে রপ্তানী করে। এমনকি বিদেশেও রপ্তানী করা হয়। সরজমিনে জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে গুঠা তৈরীর সময় প্রায় ৩০-৩৫ জন গৃহিনীর সাকেলা বলেন তাদের এ কাজটি সংসারের কাজ করার ফাঁকে ফাঁকে করা যায়। শিবগঞ্জ উপজেলার মোবারকপুর ইউনিয়নের এক গৃহিনী ও অনার্স পড়–য়া মাসা. বৃষ্টি জানান,আমার স্বামী আমাকে চারটি গরু কিনে দিয়েছেন। লেখা্পড়া ও সংসারের কাজ করেও আমি গরু পালন করি। এটি আমার এক ধরনের নেশা। তার সাথে সাথে গরুর গোবর থেকে প্রতিদিন প্রায় ৩০টি গুঠা তৈরী করে বাঁশ বেঁধে তারে সারিবন্ধ ভাবে দাঁড় করিয়ে শুকাই। মাঝে মাঝে এপিট ওপিট উল্টাইতে হয়। শুকিয়ে গেছে বাঁশের তৈরী করা মাচায় গুছিয়ে রাখি। মাস থেকে বা ১৫দিন পর ভ্যান নিয়ে আসা পাইকার বা ক্রেতাদের কাছে গুঠা প্রতি দুই টাকা দরে বিক্রী করে। তাতে প্রতিমাসে আমার আয় হয় প্রায় ১৮০০ টাকা। যার মধ্যে থেকে আমার স্বামীকে কিছু টাকা দিই এবং কিছু টাকা আমার কাছে রেখে বিভিন্ন কাজে খরচ করি। এ কাজে আমার লেখাপড়া ও সংসারের কোন ক্ষতি হয় না। শুধু বাড়তি কিছু পরিশ্রম করতে হয়। তিনি আরো জানান, এ গুঠা দিয়ে সারা বছর জ্বালানীর যোগান দেয়। দাই পুখুরিয়া ইউনিয়নের একেবারে অসহায় গৃহিনী আলেয়া খাতুন জানান,আমার স্বামী একজন শ্রমিক। অতি কষ্টে একটি গুরু কিনে দিয়েছেন। এটিই আমাদের সম্বল। এ গরুর গোবর থেকে প্রতিদিন প্রায় ১০টি গুঠা বা নুনদা তৈরী করে বিক্রী করে গরুর খাবার ক্রয় করি । চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শহর থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে শিবগঞ্জের লক্ষ্ীপুর গ্রামের গৃহবধূ আয়েশা খাতুন বলেন, প্রতি মাসে তিনি দেড় হাজার ঘুঠা বানাতে পারেন। সেগুলো রাস্তার পাশে অথবা বাড়ির মধ্যেই শুকিয়ে বিক্রি করেন। সেই টাকা দিয়ে আমরা বিদ্যালয়ে পড়–য়া ছেলে মেয়েদের পড়ার খরচ বহন করি। এ কাজে খরচ বলতে শুধু পাটকাঠি কিনতে হয়। মনাকষা ইউনিয়নের পারচৌকা গ্রামের সনাতন ধর্মানুসারী শ্রী সবিতা সাহা জানান আমার স্বামী একজন গরুর রাাখাল। ছোট-বড় দিয়ে আমার ৩৫টি গরু আছে। দিনের বেলায় আমার স্বামী সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাঠে গরুগুলো চরায়। শুধু রাতের গোবর দিয়ে প্রতিদিন ১০০ টি গুঠা তৈরী করি। সপ্তাহ বা ১৫দিন পর পর ভ্যানওয়ালার কাছে দুই টাকা দরে বিক্রী করি। সে টাকা দিয়ে গরুর জন্য খড়ি, ক্রয় করি। মাঝে মাঝে সংসারের অন্যান্য কাজেও খরচ করি। আমি এ কাজটি সংসারের করার পর করি। তবে মাঝে মাঝে আমরা শাশুড়ী সাহায্য করেন। আমার কাছে কাজটি খুব আনন্দের। কারণ এর মাধ্যমে আমি আমার কর্মের সন্ধান পেয়েছি। বীর মুক্তিযোদ্ধ তমলিম উদ্দিন মাস্টার বলেন গুঠা চাঁপাইনবাবগঞ্জের ঐতিহ্য। আমাদের মা খালাবরাও এ কাজটি করেছেন। এর মাধ্যমে গ্রাম্য মহিলারা সাংসারিক কাজের পর গুঠা তৈরী করে সংসারের স্বচ্ছলতা আনে এবং সংসারে সারা বছরের জ্বালানীর ব্যবস্থাও হয়। গুঠা জ্বালানী হিসাবে ব্যবহারিত হওয়ায় গাছ কাটা কম হয় এবংয় পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা হয়।এটি আমাদের এলাকায় কুটির শিল্পের পর্যায়ে পড়ে। শিবগঞ্জ উপজেলা সমাজ সেবা অফিসার কাঞ্চন কুমার দাস বলেন, গুঠা একটি উত্তম জ্বালানী। এ জ্বালানীর ছাই একটি উত্তম সার। ্এই গুঠা তৈরীর কারিগর জেলার শত শত মহিলা বাড়তি আয় করতে পারে। আমি চেষ্টার করবো একটি কুটির শিল্পের আওয়াতায় আনার জন্য উদ্ধর্তন কর্তৃ পক্ষের সুদৃষ্টি কামনায় আলোচনা করবো।

Leave Your Comments

Trending News